বাংলাদেশের চা বাগানের ইতিহাস জানুন? Bangladesh tea gardens history
১৮৪০ সালে চট্টগ্রামে চীন থেকে আমদানি করা কয়েকটি গাছ এবং কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেনে চীনের কিছু উদ্ভিদের মাধ্যমে চা চাষ শুরু হয়। ১৮৬০ সালে লালচাঁদ ও মাটিরাঙ্গা নামে আরও দুটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের চা বাগান সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক চা সম্পর্কে মজার কিছু কথা।
চা সাধারণত এক ধরণের সুগন্ধযুক্ত এবং স্বাদযুক্ত গরম পানীয়, যা চা থেকে বা গরম জলে তৈরি করা হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম "ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস" 'চা পাতা' একটি কৃষিজাত পণ্য, যা কার্যত বিভিন্ন উপায়ে চা পাতা, পর্ব এবং মুকুট আকারে উত্পাদিত হয়। ইংরেজিতে চা শব্দটি গ্রীক দেবী থিয়ারের নামে নামকরণ করা হয়েছে। চীনে 'টি'-এর উচ্চারণ ছিল 'চি'।
এরপর ‘চা’ হয়ে যায়, পানির পর চা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পানীয়। এটি একটি মসৃণ, শান্ত স্বাদ আছে এবং অনেকে এটি উপভোগ করে। প্রস্তুতির প্রক্রিয়া অনুসারে চাকে পাঁচটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, কালো চা, সবুজ চা, ব্রোথ চা, উল বা ওলং চা এবং প্যারাগুয়ে চা এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, ভাতের চা সহ আরও বিভিন্ন ধরণের চা রয়েছে।
তবে সবচেয়ে পরিচিত এবং ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উল এবং কালো চা। যদিও প্রায় সব চাই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি করা হয়, তবে এক ধরনের চা তার বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতির কারণে স্বাদের একটি। খাঁটি চা হল এক ধরনের ভেগান চা যা অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশের চা বাগানের ইতিহাস!
১৮৪০ সালে, প্রথম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কাস্টম কালেক্টর মিঃ স্কোনস তিনি চীন এবং আসাম বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চা বাগান সংগ্রহ করেন কিন্তু তার প্রচেষ্টা প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। পাইওনিয়ার চা বাগান গড়ে তোলেন তিনি।
এরপর বিখ্যাত ব্রিটিশ চা শিল্প উদ্যোক্তা মিঃ জে হেগ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া-কোদালিয়ায় চা উৎপাদন শুরু করেন। ১৮৪৩ সালে সেখানে চা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করা হয়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের নিকটবর্তী মালিনীছড়ায় বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়।
সিলেট অঞ্চলে চা চাষের পর চা বাগান বাড়তে থাকে এবং দেশের মানুষ ধীরে ধীরে চায়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭টি জেলায় ১৬৪টি চা বাগানে চা উৎপাদন হচ্ছে। এসব বাগানে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ হেক্টর জমিতে চা রোপণ করা হচ্ছে।
যেসব জেলায় চা বাগান রয়েছে সেগুলো হলো- মৌলভীবাজারে ৯৩টি, সিলেটে ২০টি, হবিগঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রামে ২১টি, রাঙামাটিতে ১টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি ও পঞ্চগড়ে ৮টি।
চা গাছের চাষ।
চা উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চলে চাষ করা যেতে পারে, যদিও প্রধান ফসল হল মৌসুমী বর্ষা জলবায়ু। প্রথম ক্ষেত্রে, পাহাড়ের ঢাল পরিষ্কার করা হয়েছিল। এর চারা আলাদা বীজতলায় তৈরি করা হয়। যখন গাছগুলি ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়, তখন সেগুলি চা বাগানে শৈবালের মধ্যে লাগানো হয়। সাধারণত দেড় মিটার পর চারা রোপণ করা হয়।
এরপর গাছের বৃদ্ধির জন্য সার ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের কাজে লাগে। কিন্তু গাছ পাঁচ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত নিখুঁত পরিপূর্ণতা অর্জন করতে পারে না। একটি চা উদ্ভিদ ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত।
তারপর আবার নতুন গাছ লাগাতে হবে। পার্বত্য অঞ্চল বা উচ্চ ঢালু জমি যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পানির বসতি থাকলে উঁচু সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভব। হিউমাস সার এবং গাঁজন করা মোটা মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের প্রয়োজন। চা চাষে ১৭৫-২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। এ জন্য মৌসুমি ও অ-আর্থিক অঞ্চলে চা চাষের উৎপাদন বেশি।
২০০৩ সালে বিশ্বে চা উৎপাদিত হয়েছিল ৩.২১ মিলিয়ন টন। ২০০৮ সালে, বিশ্ব চা উৎপাদন ছিল ৪.৭৩ মিলিয়ন টনের বেশি। চায়ের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদক হিসেবে - গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক অন্যতম।
চা গাছ কত প্রকার!
আসাম ও চীনে দুই ধরনের চা গাছ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অসমিয়া চা গাছের চাষ বেশি হয়। এই জাতের গাছ অনেক বড় এবং অনেক পাতাযুক্ত। এ কারণে এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। গাছটি প্রায় ৬ মিটার লম্বা বা ২০ ফুট লম্বা।
পাতার নাগাল পেতে এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলিকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের বেশি বাড়তে দেওয়া হয় না। ছেঁটে ফেলার ফলে চা গাছগুলো কষ্টকর হয়ে পড়ে। অন্যদিকে চীনা গাছগুলো আকারে বেশ ছোট। পাতার সংখ্যাও খুবই কম। গাছ আঁকড়ে না থাকলেও পাতাগুলো উঁচুতে থাকে।
চা শিল্পে কর্মসংস্থান!
চা শিল্পে কাজ করছে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ। এটি একটি শ্রমসাধ্য এবং কৃষিনির্ভর শিল্প কারণ চা উৎপাদনের জন্য প্রচুর শ্রমের প্রয়োজন হয়। বিংশ শতাব্দীর দশকের শুরুতে চা শিল্পে ১,২১,০০০ পুরুষ ও মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত ছিল এবং ৩,৫২,০০০ ছেলে ছিল যারা তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। বাংলাদেশি চা শ্রমিকদের বেশিরভাগই ভারত থেকে এসেছেন, কিন্তু এখন তারা প্রায় সবাই বাংলাদেশি নাগরিক।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি, তাদের পূর্বপুরুষরা মূলত ভারতের ছোট নাগপুর-ঝাড়খণ্ড অঞ্চল থেকে ভারতে এসেছিলেন। চা-শ্রমিকদের পূর্বপুরুষদের অনেকেই বিহার, উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ এবং ছত্তিশগড় থেকে এসেছিলেন। কুলি নামে পরিচিত চা-শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে নির্মিত চা-কুণ্ডলীর ছোট্ট ঘরে বসবাস করছে। প্রজাতির টেকটোনিক সমাজে এখন একটু বেকারত্বের সমস্যা রয়েছে।
বাংলাদেশের চা বাগানের সাফল্য!
২০০৭ সাল থেকে চা বাগানের ইজারা চুক্তি বন্ধ ছিল। ভূমি মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, চা বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় বাগানগুলো লিজের আওতায় আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। চা বাগানের ইজারা নিয়ে গত দুই বছরে সিলেট জেলা প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, সিলেট জেলার ১৯টি চা বাগানের মধ্যে ১৬টি চা বাগানের ইজারা/ইজারা নবায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ৭টি চা বাগান নতুন করে ইজারার আওতায় আনা হয়েছে এবং বাকি ৩টি চা বাগানের ইজারা অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার:
এটি বাংলাদেশের চা বাগান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য। আপনি যদি কিছু শেয়ার করতে চান তাহলে নিচে মন্তব্য করে আমাকে জানান।