বর্ষাকালে বাজারে নতুন একটি হালকা হলুদ ফল দেখা যায়। টক-মিষ্টি ফলটিও ঔষধি গুণে ভরপুর। যদিও গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বন্য গাছ হিসেবে বেড়ে ওঠে, তবে ভারত, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। হ্যাঁ, বন্ধুরা ঠিকই বলেছেন, বাংলায় ফলটি লটকন নামে পরিচিত। লটকনের ইংরেজি নাম। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আদি নিবাস।

লটকন এর বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে যেমন হারফাতা, দুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ, কিচ্যান ইত্যাদি। লটকন এক সময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিলেন। বর্তমানে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপক হারে হচ্ছে। রসালো লটকনের উন্নত জাতের চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তাও অনেক বেড়েছে। লটকনেরে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং এনজাইম রয়েছে যা শরীর গঠন এবং কোষের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।

লটকন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা!

লটকন এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। ফলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এই ফলগুলিতে জল, প্রোটিন, ফাইবার, কিছু ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ রয়েছে। আসুন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য লটকনের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও কথা রয়েছে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ:

একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি বা আমরা অনেকেই জানি যে ফল ও সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কারণ এই ফলটি একাধিক ভিটামিন এবং অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ যা ক্যান্সার কোষ গঠনে বাধা দেয়। লটকন ভিটামিন "সি" সহ আরও অনেক পুষ্টিতে পূর্ণ তাই এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যবহৃত ফল হতে পারে।

ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে ওঠা:

আমাদের ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই কাজকে এত বেশি গুরুত্ব দিই যে আমরা আমাদের শরীরের পুষ্টির সঠিক যত্ন নিতে ভুলে যাই। এছাড়া আমাদের অনেকেরই কম পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে। ফলে আমরা পানিশূন্যতায় ভুগি। ডিহাইড্রেশনের কারণে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি।

লটকন পানিশূন্যতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে কারণ এই ফলটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল রয়েছে। পানিশূন্যতা দূর করতে আমরা এই ফল খেতে পারি। এটি ডিহাইড্রেশন দূর করার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

লটকন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি একটি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে:

লটকন ফল ফাইবার সমৃদ্ধ যা পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কাজ করতে সাহায্য করে। ফাইবার হজম অঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে:

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি ২০১৪ মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে উচ্চ ফল খাওয়া টাইপ -2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে লটকন ফল খুবই উপকারী। এই ফলটিতে অতিরিক্ত চিনি থাকে না, তাই এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।

গর্ভবতী মহিলাদের প্রসব পরবর্তী পুষ্টি:

যে মায়েরা গর্ভাবস্থার পরে সন্তান প্রসব করেন তাদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য প্রচুর পুষ্টি প্রয়োজন। লটকন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের উত্স হতে পারে। এই ফলটি সন্তান প্রসবের পর গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বাড়তি শক্তি জোগাবে।

চর্মরোগ নিরাময়ঃ

চর্মরোগের জন্য লটকনের অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। এই ফলটি চুলকানি, খোসপাঁচড়া এবং খুশকির মতো বিভিন্ন চর্মরোগ সারাতে সক্ষম। চর্মরোগ নিরাময়ে ফলটি পেস্ট করুন এবং ত্বকে আলতোভাবে ব্যবহার করুন।

শরীরের শক্তির উৎস:

শরীরে শক্তি বৃদ্ধির জন্য লটকন একটি দারুণ ফল। ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিন রয়েছে যা শরীর দ্বারা গ্রহণ করার পরে শক্তিতে রূপান্তরিত হবে। সারাদিন সক্রিয় থাকার জন্য আমরা লটকন খেতে পারি।

উপসংহার:

যাই খান না কেন, পরিমিত পরিমাণে খান। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝতে. অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। আপনি যদি কোনো জটিল রোগে ভুগে থাকেন বা নিয়মিত চিকিৎসা কোর্সে ভুগে থাকেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ্যই লটকন খেতে হবে।